ঢাকা,সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

কক্সবাজারে দুইটি আসনে নির্বাচন করবে জামায়াত

বিশেষ প্রতিবেদক:

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজারের ৪টি সংসদীয় আসনের মধ্য থেকে দুইটিতে পৃথক নির্বাচন করবে জামায়াত। আসন দুইটি হলো- কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) ও কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু)। নির্বাচনের লক্ষ্যে এখন চলছে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ। নেওয়া হচ্ছে তৃণমূল পর্যায়ের মতামত। যে কোন সময় চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে বলে দলটির নির্ভরযোগ্য একটি সুত্র জানিয়েছে।

কক্সবাজার জেলা জামায়াতের একটি সুত্র থেকে জানা গেছে, কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনে দলের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল সাবেক এমপি আলহাজ্ব এএইচএম হামিদুর রহমান আজাদের নাম অনেকটা চূড়ান্ত। এ আসনে তারা কাজ শুরু করেছেন।

কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় তিনজনের নাম ওঠে এসেছে। তারা হলেন- জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান, সেক্রেটারী ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিএম রহিমুল্লাহ এবং সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এডভোকেট সলিম উল্লাহ বাহাদুর। এই তিন প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক জরিপ ও মতামত নিচ্ছে দলটি।

কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনে বিকল্প প্রার্থী না থাকায় প্রার্থী মনোনয়নে কোন টেনশন করছেনা জামায়াত। তবে, সদর আসনে তিনজন প্রার্থী থাকায় সিদ্ধান্ত নিতে তাদের একটু বেগ পেতে হচ্ছে। এমনটি জানালেন দলের জেলা পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতা। তবে, সহসাই একজনের নাম চূড়ান্ত করে কেন্দ্রে পাঠানো হবে বলেও জানান তারা।

জামায়াতের গঠনতন্ত্র মতে, চূড়ান্ত প্রার্থী কে হবেন? তা ঘোষণার আগে জানানো হয়না। প্রার্থী নিজেও দাবী করতে পারেনা।

জামায়াত মনে করে, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে হঠিয়ে জামায়াতের প্রার্থী আলহাজ্ব এএইচএম হামিদুর রহমান আজাদ বিজয়ী হন। এ কারণে আসনটি কোনভাবেই তারা জোটকে ছাড়বেনা।

২০ দলীয় জোট নেত্রী বিএনপির চেয়ারপারস বেগম খালেদা জিয়াও এ আসনে জামায়াতকে নির্বাচন করতে সংকেত দিয়েছেন বলেও বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম সংবাদ ছেপেছে।

কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পরপর দুইবার জামায়াতের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছে। বিশেষ করে, গত উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যানসহ পুরো প্যানেলই জামায়াতের সমর্থনে বিজয়ী হয়। রামু উপজেলা পরিষদেও জামায়াতের ভাইসচেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিল। যদিওবা গতবার উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে জামায়াত হেরেছে।

জামায়াত মনে করে, কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো তাদের প্রার্থী রয়েছে। জোটগত হোক বা পৃথক হোক, এ আসনে তারা বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবে।

তবে, সাধারণ মানুষের বিশ্লেষণ ভিন্ন। জামায়াত যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত সংগঠন। তাদের আমির সেক্রেটারী থেকে শুরু করে নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের অনেকের ফাঁসি হয়ে গেছে। অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতা কারান্তরীন। যারা বাইরে রয়েছে তাদের অনেকের মাথায় মামলার ঝুলি। আদালতে হাজিরা দিতে নেতাকর্মীদের অধিকাংশ সময় পার হয়ে যাচ্ছে। সরকারের চাপমুক্ত হয়নি এখনো জামায়াত। সব মিলিয়ে আগামী সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের অংশ গ্রহণের ধরণটা কেমন হতে পারে তা নিয়ে অনেকের কৌতুহল রয়ে গেছে।

তবে, জামায়াতের বিশ্লেষণটা অন্যরকম। তারা আদর্শিক দল। অন্যান্য দলের সঙ্গে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রতিযোগিতা ছিল। কোন কালেই তাদের সুসময় ছিলনা। সব সময় প্রতিকূল পরিস্থিতিতে রাজনীতি করছে জামায়াত।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিএম রহিমুল্লাহ বলেন, বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সাথে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে আমরা বিজয়ী হয়েছি। নির্বাচনের পর আমাদের প্রতি জনগণের আস্থা ও সমর্থন আরো বেড়েছে। সাধারণ মানুষের সমর্থনের পাশাপাশি সাংগঠনিকভাবেও সদর-রামু আসনে জামায়াত শক্তিশালী। এ কারণে পৃথক নির্বাচন করলেও জামায়াতের প্রার্থী জিতবে বলে দাবী করেন তিনি।

এদিকে জামায়াতের একটি সুত্র জানিয়েছে, সারাদেশে ৮টি আসনে পৃথক নির্বাচন করবে তারা। সেখানে কক্সবাজারে দুইটি, রাজশাহীতে তিনটি এবং সাতক্ষিরায় ৩টি আসন। আর জোটগত হলে অন্তত ৬০টি আসন দাবী করবে জামায়াত। সেখান থেকে ন্যুনতম ৪০ আসন নিশ্চিত পেতে চায় তারা। কোন কারণে জোটগত নির্বাচন না হলে সুনির্দিষ্ট ১০০ আসনে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জামায়াত। সম্ভাব্য আসনে তাদের প্রার্থী তালিকাও চূড়ান্ত পর্যায়ে। তৃণমূলের মতামত নিয়ে তালিকা প্রকাশ করবে।

পাঠকের মতামত: